Agrani Bank PLC সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য: সেবা, শাখা ও আর্থ-সামাজিক অবদান
অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ সাবেক কমার্স ব্যাংক ও হাবিব ব্যাংক লিমিটেডের বাংলাদেশ শাখাসমূহের দায়-সম্পদ সমন্বয়ে এটি গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ মালিকানাধীন এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের আর্থিক খাতের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ১৯৯৫ সালে অগ্রণী ব্যাংক জাতীয় প্রেসক্লাবে দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় নগদ প্রদান মেশিন (ATM) চালু করে ব্যাংকিং সেবায় অগ্রদূত ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রধান সেবা
অগ্রণী ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাব খোলা, মেয়াদী আমানত এবং ঋণ সুবিধাসমূহ। সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাব: অ্যাকাউন্টধারীরা চেকবই, এটিএম কার্ড ও অনলাইনে হিসাব ব্যবস্থাপনার সুবিধা পায়। ঋণ সেবা: ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ, শিক্ষা ঋণ, এসএমই ঋণ, কৃষি ঋণ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে। রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক লেনদেন: বিদেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের মজুরি প্রেরণে ব্যাংকের অবস্থান শক্তিশালী। সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স সহজে পাঠানোর জন্য “Agrani Remit App” চালু করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকটি বৈদেশিক রেমিট্যান্স সংগ্রহে অসামান্য অবদানের জন্য ‘রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ অর্জন করেছে। এছাড়া আমদানি-রফতানি লেনদেন, ট্রেড ফাইন্যান্স ইত্যাদি কর্পোরেট ব্যাংকিং সেবাও প্রদান করে থাকে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং ও অনলাইন সুবিধা
অগ্রণী ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় অগ্রদূত। ব্যাংকের স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ ২৪ ঘণ্টা পাওয়া যায় এবং মোবাইলে ব্যাংকিং লেনদেনের সুযোগ দেয়। অ্যাপে বিকাশ ও নগদে অর্থ স্থানান্তর, অন্যান্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রেরণ (BEFTN) এবং মোবাইল রিচার্জসহ বহুবিধ সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং এবং এসএমএস ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসেই বিল পরিশোধ, ফান্ড ট্রান্সফার এবং অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনা করতে পারে। ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং (দুয়ার ব্যাংকিং) সেবা চালু রেখেছে, যাত্রীরা মোবাইল এটিএম বুথ থেকে নগদ উত্তোলন বা জমা দিতে পারেন। ডিজিটাল উদ্যোগ হিসেবে Agrani Smart Banking অ্যাপের মাধ্যমে বিএফটিএন, বিকাশ/নগদ ও কিউআর কোড ব্যবহারসহ নানা সেবা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
শাখা ও এটিএম নেটওয়ার্ক
অগ্রণী ব্যাংকের শাখা নেটওয়ার্ক সারাদেশে বিস্তৃত। রাজধানী ঢাকার দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৯৭২টি শাখায় ব্যাংকের পরিষেবা রয়েছে। এছাড়া ৬০০টিরও বেশি এজেন্ট বুথের মাধ্যমে গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় টাকা লেনদেনের সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক ১৯৯৫ সালে প্রথম এটিএম চালু করার পর এটিএম নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছে; এখন অনেক শাখা ও বিদেশি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে নিজস্ব ও শেয়ারড এটিএম বুথ রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকের মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কানাডায় রেমিট্যান্স হাউজ প্রতিষ্ঠিত আছে, যা বিদেশি মজুদ প্রবাহ সহজতর করতে সহায়ক।
গ্রাহকসেবার মান
অগ্রণী ব্যাংক গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে শাখা-ভিত্তিক সহায়তা কেন্দ্র, হটলাইন ও অনলাইন সাপোর্ট চালু রেখেছে। শাখা, কল সেন্টার এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি ও তথ্যসেবা দেওয়া হয়। যদিও অনলাইন পর্যালোচনায় কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা এসেছে, ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে সেবার মান উন্নয়নের চেষ্টা করছে। নতুন ডিজিটাল সেবার পাশাপাশি ব্যাংক অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে।
আর্থ-সামাজিক অবদান ও CSR কার্যক্রম
অগ্রণী ব্যাংক তার কোর ব্যবসার বাইরে সামাজিক অবদানেও জড়িত। দুর্যোগ ত্রাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দান-অর্থায়ন এবং যুব-খেলাধুলার উন্নয়নে ব্যাংকের অবদান রয়েছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অগ্রণী ব্যাংক দেশের অন্যতম বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক হিসেবে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এটি সারাদেশে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা সরকারি উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে এবং কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) কার্যক্রমের আওতায় জনগণকে সহায়তা প্রদান করে থাকে।
সূত্র: ব্যাংকের ইতিহাস, সেবা ও উদ্যোগ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সংবিধানভুক্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং সংবাদ মাধ্যম থেকে। এই তথ্যাদি অগ্রণী ব্যাংকের ওয়েবসাইট, নিউজ পেপার আর্থিক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
Join the conversation